আরণ্যকের মে দিবস

আরণ্যক নাট্যদল নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণী সংগ্রামের সুতীক্ষ হাতিয়ার এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে। অর্থাৎ সম্রাজবাদ তথা শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির মতাদর্শে বিশ্বাস করে নাট্যচর্চা করে। সে কারণে শ্রমিক শ্রেণীর মতাদর্শ লালন করে মননেও স্বপ্নে। ১লা মে সমগ্র বিশ্বব্যাপী শ্রমিক শ্রেণীর বিশেষ দিবস হিসেবে স্বীকৃত। সে কারণে আরণ্যক নাট্যদল প্রতি বছর ১লা মে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৩ সাল থেকে তারা নিয়মিতভাবে মে দিবস উদযাপন করে আসছে। প্রথম মে দিবস উদযাপনটি আরণ্যক তথা বাংলাদেশে সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাসে। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৯৮৩ সাল, ১লা মে- সারাদেশব্যাপী তখন সামরিক শাসন। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মে দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয় আরণ্যক। কিন্তু তৎকালীন সামরিক জান্তা শহীদ মিনারে মে দিবস উদযাপনের অনুমতি দেয় না- বরং বাধা প্রদান করে।আরণ্যক নাট্যদল তখন শহীদ মিনারের নিকটবর্তী বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে মে দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রায় স্বল্প প্রচারে নাট্যকর্মী, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মীদের উপস্থিতিতে প্রথম মে দিবস উদযাপন হয় বাংলা একাডেমীতে। তার পরের বছর থেকে অদ্যাবধি অর্থাৎ ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর আরণ্যক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়মিতভাবে মে দিবস উদযাপন করে আসছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে মে দিবস উদযাপনের মধ্যে দিয়ে আরণ্যক নাট্যদল এক ইতিহাস সৃষ্টি করে। কোনো নাট্যদল বা সাংস্কৃতিক দলের মধ্যে আরণ্যক প্রথম এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রতিবছর মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে আরণ্যক একটি করে নতুন পথ নাটকের প্রযোজনা করে থাকে।আরণ্যক নিয়মিতভাবে যে পথনাটকের চর্চা করে আসছে তার অধিকাংশ বা বলতে গেলে প্রায় সব নাটকই ১লা মে উপলক্ষে নির্মিত। নতুন পথ নাটকের প্রযোজনা ছাড়া থাকে কবি কণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, দেশের গান এ অনুষ্ঠানে স্থান পায়। সেই সাথে দেশের কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিল্পী যারা সাম্যবাদে বিশ্বাসী তাদের একজন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন এবং বক্তব্য প্রদান করে। তবে ১লা মে তে আরণ্যকের নতুন পথ নাটক সকল শ্রেণীর দর্শকের কাছে একটি প্রধান আকর্ষণ।প্রযোজনা নিয়ে অংশগ্রহণ করে। আরণ্যকের মে দিবস উদযাপন বর্তমানে একটি জাতীয় অনুষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছে।